Best Child Neurologist

করোনাকালীন অটিজম ও বিশেষ শিশুদের জন্য করণীয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস বড়দের পাশাপাশি শিশুদের মধ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে এবং তা শিশুদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। করোনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থেকে দূরে রাখার জন্য স্বাভাবিক শিশুদের পাশাপাশি বিশেষ শিশুদেরও একটি রুটিন করুন। তাদের খাওয়া দাওয়া, খেলাধূলা, ঘুম ও শিক্ষাদীক্ষা একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী চলতে অভ্যস্ত করুন।

কেমন হতে পারে সেই রুটিন?

বাড়িতে শিশুর খাবার-দাবার:

এসময় বিশেষ শিশুরা বাড়িতে তাদের পূর্বের স্বাভাবিক খাবার খাবে। তবে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও ডাল প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খাবে। তাতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সবুজ শাকসবজি-ফলমূল বেশি খাবে এবং তাদের ভিটামিনস ও মিনারেল যুক্ত খাবার বেশি খেলে তাদের ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা পাবে। প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে এসময়।

এছাড়াও, করোনাভাইরাস নাক ও মুখে দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং প্রথম ৩-৫ দিন তারা মানুষের গলায় সংক্রমিত হয়। এজন্য দিনে ৩-৫ বার গরম পানি লবন দিয়ে / লেবু চা এসময় বিশেষ শিশুর করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা করবে।

বাড়িতে খেলাধূলা/সময় কাটানো:

করোনাকালীন সময়ে এই বিশেষ শিশুদের মধ্যে মানসিকভাবে একধরনের বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতা কাজ করবে। কারণ তারা অন্যদের সাথে খেলতে পারছে না। তাদের ভাবগুলোর আদান প্রদান করতে পারছে না। যদিও তাদের ভাবের বহিঃপ্রকাশটা অন্যদের মতো নয়, ভাব বিনিময় অন্যশিশুদের তুলনায় আলাদা।

সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিন:

তাদেরকে সবসময় সঙ্গ দিন এবং তাদেরকে সময় দিন এবং বাড়ীর ছোট ছোট কাজে নিয়োজিত রাখুন। বাসায় সম্ভব হলে পাজল দিয়ে খেলা, বাবল্ ফুলানো খেলা, টুকি খেলা, পুতুল খেলা, চা বানানো খেলা ইত্যাদি খেলাগুলিতে নিয়োজিত রাখুন। আর এ সমস্ত খেলাতে পিতা-মাতা উভয়েই আপনার শিশুর সাথে খেলুন এবং শিশুর খেলাকে আরো আনন্দময় করুন।

বাসায় শিক্ষাদীক্ষা/পড়াশুনা:

যে সমস্ত বিশেষ শিশু নিয়মিত স্কুলে যেত, তাদের হঠাৎই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুর আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। আমরা জানি ওরা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকতে চায় এবং রুটিন মেনে চলতে চায়। তাই এসময় শিশুর জন্য বাসায় স্কুল সময়ে একটি সেশনের আয়োজন করুন (১-২ ঘন্টা), সেটি হতে পারে সকালে ১০-১২টা বা ৯-১১ টায়। যেখানে স্কুলের সাথে মিল রেখে শিশুকে বয়স অনুযায়ী ছবি আঁকা শিখান, ছড়া শিখান, গল্প বলুন, ধর্মীয় বিধিবিধান শিখান, গান বা মিউজিক শিখান। এতে শিশু তার বিভিন্ন শিক্ষায় পারদর্শি হবে এবং তার সময়গুলি খুব ভাল কাটবে। স্কুল শিক্ষকের সাথে এসময় নিয়মিত পড়াশুনার ব্যাপারে যোগাযোগ রাখুন। 

বিশেষ শিশুর ঘুম:

আপনার বিশেষ শিশুর ঘুমের প্রতি বিশেষ নজর রাখুন। একটি কথা মনে রাখবেন, রাতের স্বাভাবিক ঘুম, দিনের আনন্দকে বাড়িয়ে দিবে অনেকগুন। করোনার এসময়ে শিশুর ও মানসিক উদ্বিগ্নতা ও উৎকন্ঠা থাকে ফলে রাতের ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে। শিশুকে রাতে ৯-১০ টার মধ্যে বেডে শোয়ানোর অভ্যাস করুন। এসময় মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস তার রাতের ঘুমের বাধাঁর কারণ হয়ে উঠতে পারে। সেদিকে খেয়াল করুন প্রয়োজন হলে তার স্বাভাবিক ঘুমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে মেলাটনিন জাতীয় ঔষধ ১/২ ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন।

বাহিরের খেলাধূলা:

৩-৪ মাস ধরেই এ শিশুরা বলতে গেলে ঘরবন্দি। তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যহত, তাই করোনার এইসময়ে তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা মাঠে (যেখানে মানুষ কম) অথবা ছাদে বিকালে খেলাধুলা অথবা হালকা শারীরিক শরীর চর্চার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাতে শিশুর শরীর ও মনের অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। খোলা মাঠ ও ছাদে নেওয়া না সম্ভব হলে , শিশুকে দিনের বেলায় ঘরের বারান্দাতে অথবা জানালার পাশে বসতে উৎসাহিত করুন।

শিশুর আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখুন:

এই সময়ে বিশেষ শিশুর আচরনের উপর মনোযোগ দিন। শিশুর হঠাৎ আচরনের পরিবর্তন দেখা গেলে, হঠাৎ অতিমাত্রায় চঞ্চলতা দেখা দিলে (হাইপার একটিভিটি) তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে খেয়াল রাখুন এই সময় শিশু যেন অতিমাএায় ডিভাইস নির্ভও না হয়ে পরে।

করোনা উপসর্গ দেখা দিলে করণীয়:

বিশেষ শিশুদের করোনার উপসর্গ অন্য শিশুদের মতোই। যেমন: জ্বর, হাঁচি, কাশি , গলা ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। উপসর্গগুলো অন্যান্য শিশুদের মতো হলেও তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং তারা নিজেদের পরিষ্কার-পরিছন্নতা নিজেরা রাখতে পারে না (অন্য শিশুদের তুলনায়)। করোনার উপসর্গ থাকলে যেমন: হালকা ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বরের জন্য নাপা বা প্যারাসিটামল এবং এন্টি হিচটামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে এবং জ্বরের জন্য গা স্পঞ্জিং করতে হবে। এছাড়াও, গলা ব্যাথা হলে লবন ও গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করবে, গরম পানি খাবে, তুলসী পাতার রস খাওয়ানো যেতে পারে।

জ্বর যদি না কমে এবং রোগ বাড়তে থাকে তাহলে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক বা হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। তবে শিশুদের হাইপারএকটিভিটি ও অন্যান্য এর জন্য নির্ধারিত ঔষধ বন্ধ করার প্রয়োজন নাই।

শিশুর সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা:

শিশু বাইরে গেলে মাস্ক পরাবেন, দিনে ৩/৪ বার সাবান পানি দিয়ে (নিজে এবং শিশুকে), গরম পানি খাওয়াবেন কয়েক বার, বাসার খেলনাগুলি সপ্তাহে ২ বার পরিষ্কার করবেন, এসময় বাড়িতে অতিথি প্রবেশ না করানোই ভাল, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে নিজে বা শিশু যাবে না। , যদি যান- শারীরিক দূরত ¡ মানা, মাস্ক ও হাঁচি কাশি সিষ্টাচার মানা, বাসায় ঢুকার পূর্ব মূহুর্তে এলকোহল যুক্ত হ্যান্ড সেনিটাইজার দ্বারা হাত সেনিটাইজ করুন, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, সর্বোপরি গোসল ও কাপড় ধৌত করে তারপর আপনার প্রিয় শিশুকে স্পর্শ করুন।

সর্বোপরি, করোনাকালীন সময়ে অটিজম ও বিশেষ শিশুর প্রতি অধিক নজর রাখুন এবং নিয়মিত এ শিশুর চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু, সাবেক চেয়ারম্যান, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: দৈনিক মেডি ভয়েস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *