সারাদেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হচ্ছে আজ। করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় মানসিকভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের বন্দিদশা থেকে যেন মুক্তি মিলছে। বন্দি থাকার কারণে যেসব শিশু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, স্কুল খোলায় তাদের এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। এমনকি অনেক শিশু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে আশক্ত হয়ে পড়েছিল। স্কুল খোলায় সেই সমস্যারও সমাধান হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিক্ষকরা যেন অনেক পড়া অল্প সময়ে শেষ করতে চাপ না দেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনরোগ বিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব আমাদের সময়কে বলেন, স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যেন অতিউৎসাহী হয়ে না পড়ে। অনেক দিন পর স্কুল খুলছে, অনেক লেখাপড়া বাকি, তাই বেশি বেশি পড়ে সব দ্রুত শেষ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন এমন আচরণ না করেন। কারণ এমনটি করলে শিশুদের মানসিক চাপ বাড়বে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় যে উপকার হওয়ার কথা, তার চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। বলা যায় হিতে বিপরীত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারিভাবে স্কুলগুলোতে ইউনিসেফের সহায়তায় তৈরি করা একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে সব সময় মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের তিন ফুট শারীরিক দূরত্বে রাখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার কথা আছে। নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে ৫ ফুটের চেয়ে ছোট আকারের বেঞ্চিতে একজন ও এর চেয়ে বড় আকারের বেঞ্চিতে দুজন শিক্ষার্থী বসানো যাবে। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দিকে পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই বেশি আসবে। বাকিদের স্কুলে আসার জন্য রোটেশন সিস্টেম অর্থাৎ আজ যারা আসবে তারা কাল আসবে না- এ নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত শিশুদের জন্য ইতিবাচক। কারণ এক বছরেরও বেশি সময় তারা ঘরবন্দি হয়ে আছে। এ সময়ে অনেক শিশু বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ওপর আশক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে বাসায় বন্দি থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনকি মনের কোণে লুকিয়ে থাকা অনেক কথা যা তারা শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে, সেগুলো কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ছিল। স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিশুদের এ মানসিক সমস্যা ও অস্থিরতা দূর হবে। তবে অসুবিধাও রয়েছে। সেটি হলো- করোনাকালীন স্কুলের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। বিশেষ করে স্কুলে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া বা সেনিটাইজারের ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, শিক্ষকরা টিকা নিয়ে থাকলেও শিশুরা এখনো টিকা পায়নি। তাই তাদের স্বাস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে পিতা-মাতা যেন দুশ্চিন্তায় না পড়ে, সে জন্য তাদের কাউন্সেলিং করতে হবে।
গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে বা সরাসরি ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ছুটি ১১ সেপ্টেম্ব^র পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি সংক্রমণের হার কমে আসায় কোভিড কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
* মনের কোণে লুকিয়ে থাকা কথা কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীদের এমন মানসিক সমস্যা ও অস্থিরতা দূর হবে -ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ
* অনেক দিন পর স্কুল খুলছে, অনেক পড়া বাকি। বেশি বেশি পড়ে সব দ্রুত শেষ করতে হবে… শিক্ষকরা যেন এমন আচরণ না করেন -ডা. সালাউদ্দিন কাউসার অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ