Best Child Neurologist

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ, কী করবেন

জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ কী এবং এ পরিস্থিতিতে কী করবেন জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।  

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুদের দেরিতে কথা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু রোগের কারণে অনেক শিশু দেরিতে কথা বলে। যেমন-

১. ডাউন সিনড্রোম: ডাউন সিনড্রোমে শিশুর শরীর তুলতুলে নরম ও মুখমণ্ডলের ধরন আলাদা থাকে। এই শিশুদের বুদ্ধি হয় না, হাঁটা, বসা, চলাফেরা করতে পারে না এবং তারা কথাও দেরিতে বলে।

২. সেরিব্রাল পালসি: জন্মের সময় কান্না করতে দেরি হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যায়, মস্তিষ্ক কাজ করে না। যার ফলে হাঁটা ও বসার মতো কথা বলাও দেরিতে হয়, শিশুর বুদ্ধি কমে যায়।

৩. অটিজম: এক্ষেত্রে হাঁটতে, বসতে বা চলতে অসুবিধা নেই, কিন্তু কথা বলতে দেরি হয়। আচরণগত অসুবিধা দেখা যায়। শিশু এক জায়গায় বসে থাকে না, নিজের মতো চলে। অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশে না, কথা বলে না, কিছু আচরণ করে যা অন্য বাচ্চারা করে না।

৪. কনজেনিটাল বা জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম: জন্মের পর যেসব শিশুর জিহ্বা বড় থাকে, জিহ্বা বের করে থাকে, পেট ফোলা থাকে, হাঁটতে ও বসতে দেরি করে সেসব বাচ্চার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকে। হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা দেরিতে কথা বলে।

৫. জন্মগতভাবে শিশু যদি কানে কম শোনে, কাছ থেকে ডাকলেও সাড়া না দেয়, এমন শিশুদের কথা বলতে দেরি হয়।

৬. শিশুর জিহ্বা যদি তালুর সঙ্গে লাগানো থাকে।

৭. শিশুর ঠোঁট কাটা, তালু কাটা থাকলে কথা বলা দেরি হতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, এগুলো ছাড়াও পরিবেশগত কিছু কারণে শিশুর কথা বলতে দেরি হয়। যেমন-

১. দেরিতে কথা বলা বা কথা কম বলার পেছনে মোবাইল ফোন দায়ী। এক বছর বয়সে অনেক শিশু কথা বলা শিখতে শুরু করার পর দেখা গেছে দুই বছর বয়সে এসে তা কমে যাচ্ছে। এর কারণ শিশুর ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব।

২. গ্রামের তুলনায় শহড়ের শিশুরা দেরিতে কথা বলে। গ্রামের শিশুরা বাবা-মাকে বেশি পাশে পায়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেশে, মোবাইল ফোন বেশি হাতে পায় না।

৩. শিশুর সঙ্গে বাবা-মায়ের কম কথা বলাও শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ। ছোট পরিবারের শিশুরাও দেরিতে কথা বলে।

৪.  বাবা-মা কর্মজীবী হলে সন্তানদের কম কথা বা দেরিতে কথা বলতে দেখা যায়।

৫. প্রবাসী বাঙালি যারা তাদের শিশুরাও অনেকে দেরিতে কথা বলে। জন্মের পর মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজের কারণে অনেক সময় শিশু কম কথা বলে, দেরিতে কথা বলে।

৬. মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ইউটিউবে মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ শিশুদের দেরিতে কথা বলার কারণ।

শিশু দেরিতে কথা বলছে কি না কীভাবে বুঝবেন?

৬ মাসের একটি শিশু বাবলিং সাউন্ড করে।

১ বছরের শিশু বাবাকে বাবা ও মাকে মা বলতে শিখে।

২ বছরের শিশু দুইটা শব্দ একসঙ্গে করে ছোট বাক্য ‘আমি খাব’, ‘আমি যাব’ এসব বলতে পারে।

৩ বছরের শিশু বড় বাক্য তৈরি করে কথা বলতে পারে, ছড়া বলতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, ৩ বছর বয়সের মধ্যে সব শিশু সব কথা বলতে পারবে এটা স্বাভাবিক। যদি কোনো শিশু তিন বছরের মধ্যে কথা না বলে তাহলে বুঝতে হবে তার কোথাও কোনো অসুবিধে আছে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা সমাধানে কী করবেন

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুর প্রথম তিন বছর বয়সেই বাবা-মা অভিভাবকদের খেয়াল করতে হবে শিশুর কথা বলায় দেরি হচ্ছে কি না। তিন বছর বয়সেই শিশু সব শিখে যায়। শিশু এক বা দুই বছরে যেসব শব্দ বলার কথা ছিল তা যদি না বলে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব শিশু নিউরোলজিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

তিন বছরের মধ্যে বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে শিশুর সমস্যা শনাক্ত করে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় কথা বলার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তিন বছর পর শিশুর কথা আসতে চায় না। কথা বলার জন্য শিশুর প্রথম তিন বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া সরকারিভাবে জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব নিউরোডিজিজ অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) নামে একটি সেন্টার রয়েছে। সেখানেও দেরিতে কথা বলা শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রোগ নাকি পরিবেশগত কারণে শিশু কথা দেরিতে বলছে সেটি শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্পিচ থেরাপি দিতে হবে।

অন্য শিশুদের তুলনায় আপনার শিশু পিছিয়ে আছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

প্রথম ৩ বছর বয়সে শিশুর মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ বিকাশ হয়, পরবর্তী ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তা চলতে থাকে। শিশুর বিকাশের সময় মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত নয় কোনোভাবেই। বাবা দেরিতে কথা বলেছে বলে সন্তান দেরিতে কথা বলছে, অগ্রজিহ্বা বা আলজিহ্বা বড় তাই কথা দেরিতে বলছে এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক সময়ে শিশুর চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ডা. গোপেন কুন্ডু।

সূত্র: The Daily Star

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *