Best Child Neurologist

Cerebal Palsy

”শিশুদের অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা”

”শিশুদের অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা” এই বইটি পড়লে এই সমস্যাগুলোর অনেক কিছু জানতে পারবেন। বর্তমানে নিরবে এই রোগটি বেড়ে যাচ্ছে। যা আমাদের সচেতনতাই পারে অনেকটা রোধ করতে।

বইটিতে যা যা রয়েছে–

** শিশুদের অটিজম সমস্যা

** শিশুদের এডিএইচডি বা অতি চঞ্চলতা সমস্যা

** শিশুদের দেরিতে কথা বলা সমস্যা

** শিশুদের খিঁচুনি রোগ ও মৃগীরোগ

** শিশুদের সেরিব্রাল পালসি সমস্যা

** শিশুদের বুদ্ধি প্রতিববন্ধিতা

** শিশুদের ডাউন সিনড্রোম সমস্যা

** ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মা ও নবজাতক

** ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও শিশুর বিকাশের সমস্যা

** বিশেষ শিশুর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রেসপাইট কেয়ার এর ভূমিকা

** শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং কিছু কথা

উপরের বিষয়গুলো আমাদের বাচ্চাদের সাথে হয়তো হচ্ছে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারছি না।

autism-book

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ, কী করবেন

জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ কী এবং এ পরিস্থিতিতে কী করবেন জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।  

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুদের দেরিতে কথা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু রোগের কারণে অনেক শিশু দেরিতে কথা বলে। যেমন-

১. ডাউন সিনড্রোম: ডাউন সিনড্রোমে শিশুর শরীর তুলতুলে নরম ও মুখমণ্ডলের ধরন আলাদা থাকে। এই শিশুদের বুদ্ধি হয় না, হাঁটা, বসা, চলাফেরা করতে পারে না এবং তারা কথাও দেরিতে বলে।

২. সেরিব্রাল পালসি: জন্মের সময় কান্না করতে দেরি হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যায়, মস্তিষ্ক কাজ করে না। যার ফলে হাঁটা ও বসার মতো কথা বলাও দেরিতে হয়, শিশুর বুদ্ধি কমে যায়।

৩. অটিজম: এক্ষেত্রে হাঁটতে, বসতে বা চলতে অসুবিধা নেই, কিন্তু কথা বলতে দেরি হয়। আচরণগত অসুবিধা দেখা যায়। শিশু এক জায়গায় বসে থাকে না, নিজের মতো চলে। অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশে না, কথা বলে না, কিছু আচরণ করে যা অন্য বাচ্চারা করে না।

৪. কনজেনিটাল বা জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম: জন্মের পর যেসব শিশুর জিহ্বা বড় থাকে, জিহ্বা বের করে থাকে, পেট ফোলা থাকে, হাঁটতে ও বসতে দেরি করে সেসব বাচ্চার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকে। হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা দেরিতে কথা বলে।

৫. জন্মগতভাবে শিশু যদি কানে কম শোনে, কাছ থেকে ডাকলেও সাড়া না দেয়, এমন শিশুদের কথা বলতে দেরি হয়।

৬. শিশুর জিহ্বা যদি তালুর সঙ্গে লাগানো থাকে।

৭. শিশুর ঠোঁট কাটা, তালু কাটা থাকলে কথা বলা দেরি হতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, এগুলো ছাড়াও পরিবেশগত কিছু কারণে শিশুর কথা বলতে দেরি হয়। যেমন-

১. দেরিতে কথা বলা বা কথা কম বলার পেছনে মোবাইল ফোন দায়ী। এক বছর বয়সে অনেক শিশু কথা বলা শিখতে শুরু করার পর দেখা গেছে দুই বছর বয়সে এসে তা কমে যাচ্ছে। এর কারণ শিশুর ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব।

২. গ্রামের তুলনায় শহড়ের শিশুরা দেরিতে কথা বলে। গ্রামের শিশুরা বাবা-মাকে বেশি পাশে পায়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেশে, মোবাইল ফোন বেশি হাতে পায় না।

৩. শিশুর সঙ্গে বাবা-মায়ের কম কথা বলাও শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ। ছোট পরিবারের শিশুরাও দেরিতে কথা বলে।

৪.  বাবা-মা কর্মজীবী হলে সন্তানদের কম কথা বা দেরিতে কথা বলতে দেখা যায়।

৫. প্রবাসী বাঙালি যারা তাদের শিশুরাও অনেকে দেরিতে কথা বলে। জন্মের পর মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজের কারণে অনেক সময় শিশু কম কথা বলে, দেরিতে কথা বলে।

৬. মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ইউটিউবে মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ শিশুদের দেরিতে কথা বলার কারণ।

শিশু দেরিতে কথা বলছে কি না কীভাবে বুঝবেন?

৬ মাসের একটি শিশু বাবলিং সাউন্ড করে।

১ বছরের শিশু বাবাকে বাবা ও মাকে মা বলতে শিখে।

২ বছরের শিশু দুইটা শব্দ একসঙ্গে করে ছোট বাক্য ‘আমি খাব’, ‘আমি যাব’ এসব বলতে পারে।

৩ বছরের শিশু বড় বাক্য তৈরি করে কথা বলতে পারে, ছড়া বলতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, ৩ বছর বয়সের মধ্যে সব শিশু সব কথা বলতে পারবে এটা স্বাভাবিক। যদি কোনো শিশু তিন বছরের মধ্যে কথা না বলে তাহলে বুঝতে হবে তার কোথাও কোনো অসুবিধে আছে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা সমাধানে কী করবেন

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুর প্রথম তিন বছর বয়সেই বাবা-মা অভিভাবকদের খেয়াল করতে হবে শিশুর কথা বলায় দেরি হচ্ছে কি না। তিন বছর বয়সেই শিশু সব শিখে যায়। শিশু এক বা দুই বছরে যেসব শব্দ বলার কথা ছিল তা যদি না বলে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব শিশু নিউরোলজিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

তিন বছরের মধ্যে বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে শিশুর সমস্যা শনাক্ত করে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় কথা বলার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তিন বছর পর শিশুর কথা আসতে চায় না। কথা বলার জন্য শিশুর প্রথম তিন বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া সরকারিভাবে জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব নিউরোডিজিজ অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) নামে একটি সেন্টার রয়েছে। সেখানেও দেরিতে কথা বলা শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রোগ নাকি পরিবেশগত কারণে শিশু কথা দেরিতে বলছে সেটি শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্পিচ থেরাপি দিতে হবে।

অন্য শিশুদের তুলনায় আপনার শিশু পিছিয়ে আছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

প্রথম ৩ বছর বয়সে শিশুর মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ বিকাশ হয়, পরবর্তী ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তা চলতে থাকে। শিশুর বিকাশের সময় মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত নয় কোনোভাবেই। বাবা দেরিতে কথা বলেছে বলে সন্তান দেরিতে কথা বলছে, অগ্রজিহ্বা বা আলজিহ্বা বড় তাই কথা দেরিতে বলছে এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক সময়ে শিশুর চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ডা. গোপেন কুন্ডু।

সূত্র: The Daily Star

আজ ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস

অটিজম ও বাংলাদেশ

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য—‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’। অটিজম নিয়ে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু

অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা, যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা লক্ষ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিস-অর্ডার বলেও থাকেন।শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। রবার্ট এল বার্কার উল্লেখ করেছেন, অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা, এতে ব্যক্তির মধ্যে বাইরের জগৎ সম্পর্কে অতি সামান্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

প্রকৃতপক্ষে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য মানুষ বা বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না বললেই চলে। বরং তার সব মনোযোগ যেন তার ইচ্ছা ও অনুভূতির মধ্যেই মগ্ন থাকে।অটিস্টিক শিশুর বিকাশ তিনটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়, যেমন—

সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা

অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা, কে কী করছে তা নিয়ে কৌতূহল না থাকা এবং অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা।

যোগাযোগ স্থাপনে বাধা

মুখের ভাষায় কথা বলতে না শেখা, কিছু কথা বলতে পারলেও অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতায় সমর্থ না হওয়া এবং ইশারা-ইঙ্গিত করতে না পারা।

আচরণের ভিন্নতা

পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করা, একই কাজ বারবার করা এবং একই খেলা বারবার খেলা।

অটিস্টিক শিশুর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য

অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও আচরণের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে অটিস্টিক শিশুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আরো বৈশিষ্ট্য হলো—

♦ নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না।

♦ কোনো খেলনা বা আনন্দদায়ক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় না বা আঙুল দিয়ে ইশারা না করা বিশেষ আচরণ বারবার করতে চায়, যেমন—বারবার হাত নাড়ানো।

 কোনো বিশেষ বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি থাকা।

♦ ভাষার ব্যবহার রপ্ত করার পর আবার তা ভুলে যাওয়া।

♦ অতিরিক্ত রুটিন মেনে চলা।

অটিজমের কারণ

অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা না গেলেও কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, অটিজমের পেছনে দুটি কারণ রয়েছে—জিনগত সমস্যা এবং পরিবেশগত সমস্যা। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ডিএনএ কপি নাম্বার ভেরিয়েন্ট নামক ত্রুটি বহন করে।

পরিবেশের বিষাক্ত উপকরণ জিনের ওপর কাজ করে স্নায়ুকোষ ধ্বংস করে। এই বিষাক্ত উপাদান গর্ভের শিশু এবং শিশুর বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ের মস্তিষ্কের কোষকে ধ্বংস করে। যেসব রাসায়নিক দ্রব্য অটিজমের জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কারি, লেড, পোকা-মাকড় মারার বিষ, খাদ্য সংরক্ষণ করার রাসায়নিক দ্রব্য, খাদ্য সৌন্দর্য বৃদ্ধির কৃত্রিম রং ইত্যাদি। কখনো কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মস্তিষ্কের কিছু অসুবিধা লক্ষ করা যায়, যেমন—

♦ মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্রিয়া।

♦ মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যালের অসামঞ্জস্যতা।

♦ শিশুর জন্ম-পূর্ব বা জন্ম-পরবর্তী কালের কোনোরূপ সংক্রমণ।

♦ মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি।

বাংলাদেশের অটিজমের অবস্থা

বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ১৯৮০ সালে প্রতি দুই হাজার ৫০০ জনে একজন ছিল অটিস্টিক এবং ২০১০ সালে ছিল ১১০ জনে একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। বর্তমানে ৫৪ জনে একজন (সিডিসি, ২০১৮ থেকে)। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপে (২০২০-২১) বর্তমানে বাংলাদেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি জরিপে (২০১৩ সাল) বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। সম্প্রতি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিস-অর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা)’-এর এক গবেষণায় বাংলাদেশে তিন বছরের নিচের শিশুদের অটিজমের হার ১০ হাজার জনে ১৭ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। দেশের সব জেলার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে একটি করে অটিজম কর্নার (১০৭টি) স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অটিজম রোগীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এগুলোর সংখ্যা খুবই কম।

অটিজম শিশুর ব্যবস্থাপনা

গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া গেলে অটিজম নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু প্রাপ্তবয়সে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পারে। শৈশবে নেওয়া পদক্ষেপ বলতে বোঝায় জন্মের ১৮ থেকে ৩৬ মাস বয়সের মধ্যে অটিজম শনাক্তকরণ ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে শিক্ষা পরিকল্পনার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিশুকে সঠিক চিকিত্সা দেওয়া। অটিস্টিক শিশুর প্রধান চিকিত্সা স্পিচ থেরাপি, নিউরোবিহেভিওরাল থেরাপি। অতিরিক্ত আচরণগত সমস্যা, ঘুমের সমস্যা ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিক্যাল চিকিত্সা এবং বিশেষ স্কুলে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে।

আমাদের করণীয়

কোনো শিশুর মধ্যে যদি অটিজমের কোনো বৈশিষ্ট্য ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে তার মা-বাবা লক্ষ করে থাকেন, তাহলে প্রথমে অবশ্যই অতি দ্রুত শিশুকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে দেখানো উচিত। জেনে রাখা ভালো যে বেশির ভাগ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি ১০ জনে একটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচণ্ড দক্ষতা থাকে। তাই এই বিশেষ শিশুকে ঠিকমতো পরিচর্যা করে সমাজে অন্যান্য শিশুর কাছাকাছি করে গড়ে তুলতে পারলে আমাদের দেশব্যাপী এ আন্দোলনে আমরা জয়ী হব।

সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ

ঘরবন্দি শিশুমনে আসবে প্রশান্তি

সারাদেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হচ্ছে আজ। করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় মানসিকভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের বন্দিদশা থেকে যেন মুক্তি মিলছে। বন্দি থাকার কারণে যেসব শিশু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, স্কুল খোলায় তাদের এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। এমনকি অনেক শিশু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে আশক্ত হয়ে পড়েছিল। স্কুল খোলায় সেই সমস্যারও সমাধান হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিক্ষকরা যেন অনেক পড়া অল্প সময়ে শেষ করতে চাপ না দেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনরোগ বিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব আমাদের সময়কে বলেন, স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যেন অতিউৎসাহী হয়ে না পড়ে। অনেক দিন পর স্কুল খুলছে, অনেক লেখাপড়া বাকি, তাই বেশি বেশি পড়ে সব দ্রুত শেষ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন এমন আচরণ না করেন। কারণ এমনটি করলে শিশুদের মানসিক চাপ বাড়বে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় যে উপকার হওয়ার কথা, তার চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। বলা যায় হিতে বিপরীত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারিভাবে স্কুলগুলোতে ইউনিসেফের সহায়তায় তৈরি করা একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে সব সময় মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের তিন ফুট শারীরিক দূরত্বে রাখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার কথা আছে। নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে ৫ ফুটের চেয়ে ছোট আকারের বেঞ্চিতে একজন ও এর চেয়ে বড় আকারের বেঞ্চিতে দুজন শিক্ষার্থী বসানো যাবে। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দিকে পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই বেশি আসবে। বাকিদের স্কুলে আসার জন্য রোটেশন সিস্টেম অর্থাৎ আজ যারা আসবে তারা কাল আসবে না- এ নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত শিশুদের জন্য ইতিবাচক। কারণ এক বছরেরও বেশি সময় তারা ঘরবন্দি হয়ে আছে। এ সময়ে অনেক শিশু বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ওপর আশক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে বাসায় বন্দি থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনকি মনের কোণে লুকিয়ে থাকা অনেক কথা যা তারা শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে, সেগুলো কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ছিল। স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিশুদের এ মানসিক সমস্যা ও অস্থিরতা দূর হবে। তবে অসুবিধাও রয়েছে। সেটি হলো- করোনাকালীন স্কুলের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। বিশেষ করে স্কুলে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া বা সেনিটাইজারের ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, শিক্ষকরা টিকা নিয়ে থাকলেও শিশুরা এখনো টিকা পায়নি। তাই তাদের স্বাস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে পিতা-মাতা যেন দুশ্চিন্তায় না পড়ে, সে জন্য তাদের কাউন্সেলিং করতে হবে।

গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে বা সরাসরি ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ছুটি ১১ সেপ্টেম্ব^র পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি সংক্রমণের হার কমে আসায় কোভিড কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

* মনের কোণে লুকিয়ে থাকা কথা কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীদের এমন মানসিক সমস্যা ও অস্থিরতা দূর হবে -ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

* অনেক দিন পর স্কুল খুলছে, অনেক পড়া বাকি। বেশি বেশি পড়ে সব দ্রুত শেষ করতে হবে… শিক্ষকরা যেন এমন আচরণ না করেন -ডা. সালাউদ্দিন কাউসার অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

দেশে প্রায় ২৩ লাখ শিশু অটিজমে ভুগছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। অটিজমে আক্রান্ত এসব শিশুদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু গবেষণায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা বাড়াতে হবে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) আয়োজিত ‘সার্টিফিকেট কোর্স অন নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক কোর্সের উদ্বোধনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। যারা অটিজমে ভুগছে, তারা আগে স্কুলে যেতে পারত না, বাড়িতে মেহমান আসলে তাদের লুকিয়ে রাখা হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের।

ডাউন সিনড্রোমে ভোগে দেশের ২ লাখ শিশু

ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর সরকারিভাবে ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর ডাউন সিনড্রোম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘যুক্ত মোড়া’।

অটিজম ও স্নায়বিকাশজনিত শিশুদের নিন বাড়তি যত্ন

অটিজম ও অন্যান্য স্নায়বিক বিকাশে সমস্যাবিষয়ক রোগব্যাধি যেমন অটিজম, সেরেব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বুদ্ধিমত্তা কম ইত্যাদি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম থাকে। তারা নিজেদের রোগ ব্যাধি বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না বিধায় করোনাভাইরাসহ যেকোনো জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে তার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তাদের থাকে কম। তাই নিতে হবে বিশেষ যত্ন।

বিশেষ শিশুদের জন্য করণীয়

অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু , চেয়ারম্যান, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও সংক্রমিত করে জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে দূরে রাখতে অটিজম ও বিশেষ শিশুদের বেশ গুরুত্ব দিতে হবে। অভিভাবকদের উচিত তাদের খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলা, বিশ্রাম, শিক্ষাদীক্ষা—সব কিছু একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী চলতে অভ্যস্ত করানো।