Best Child Neurologist

Down Syndrome

”শিশুদের অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা”

”শিশুদের অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা” এই বইটি পড়লে এই সমস্যাগুলোর অনেক কিছু জানতে পারবেন। বর্তমানে নিরবে এই রোগটি বেড়ে যাচ্ছে। যা আমাদের সচেতনতাই পারে অনেকটা রোধ করতে।

বইটিতে যা যা রয়েছে–

** শিশুদের অটিজম সমস্যা

** শিশুদের এডিএইচডি বা অতি চঞ্চলতা সমস্যা

** শিশুদের দেরিতে কথা বলা সমস্যা

** শিশুদের খিঁচুনি রোগ ও মৃগীরোগ

** শিশুদের সেরিব্রাল পালসি সমস্যা

** শিশুদের বুদ্ধি প্রতিববন্ধিতা

** শিশুদের ডাউন সিনড্রোম সমস্যা

** ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মা ও নবজাতক

** ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও শিশুর বিকাশের সমস্যা

** বিশেষ শিশুর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রেসপাইট কেয়ার এর ভূমিকা

** শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং কিছু কথা

উপরের বিষয়গুলো আমাদের বাচ্চাদের সাথে হয়তো হচ্ছে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারছি না।

autism-book

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ, কী করবেন

জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ কী এবং এ পরিস্থিতিতে কী করবেন জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।  

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুদের দেরিতে কথা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু রোগের কারণে অনেক শিশু দেরিতে কথা বলে। যেমন-

১. ডাউন সিনড্রোম: ডাউন সিনড্রোমে শিশুর শরীর তুলতুলে নরম ও মুখমণ্ডলের ধরন আলাদা থাকে। এই শিশুদের বুদ্ধি হয় না, হাঁটা, বসা, চলাফেরা করতে পারে না এবং তারা কথাও দেরিতে বলে।

২. সেরিব্রাল পালসি: জন্মের সময় কান্না করতে দেরি হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যায়, মস্তিষ্ক কাজ করে না। যার ফলে হাঁটা ও বসার মতো কথা বলাও দেরিতে হয়, শিশুর বুদ্ধি কমে যায়।

৩. অটিজম: এক্ষেত্রে হাঁটতে, বসতে বা চলতে অসুবিধা নেই, কিন্তু কথা বলতে দেরি হয়। আচরণগত অসুবিধা দেখা যায়। শিশু এক জায়গায় বসে থাকে না, নিজের মতো চলে। অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশে না, কথা বলে না, কিছু আচরণ করে যা অন্য বাচ্চারা করে না।

৪. কনজেনিটাল বা জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম: জন্মের পর যেসব শিশুর জিহ্বা বড় থাকে, জিহ্বা বের করে থাকে, পেট ফোলা থাকে, হাঁটতে ও বসতে দেরি করে সেসব বাচ্চার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকে। হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা দেরিতে কথা বলে।

৫. জন্মগতভাবে শিশু যদি কানে কম শোনে, কাছ থেকে ডাকলেও সাড়া না দেয়, এমন শিশুদের কথা বলতে দেরি হয়।

৬. শিশুর জিহ্বা যদি তালুর সঙ্গে লাগানো থাকে।

৭. শিশুর ঠোঁট কাটা, তালু কাটা থাকলে কথা বলা দেরি হতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, এগুলো ছাড়াও পরিবেশগত কিছু কারণে শিশুর কথা বলতে দেরি হয়। যেমন-

১. দেরিতে কথা বলা বা কথা কম বলার পেছনে মোবাইল ফোন দায়ী। এক বছর বয়সে অনেক শিশু কথা বলা শিখতে শুরু করার পর দেখা গেছে দুই বছর বয়সে এসে তা কমে যাচ্ছে। এর কারণ শিশুর ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব।

২. গ্রামের তুলনায় শহড়ের শিশুরা দেরিতে কথা বলে। গ্রামের শিশুরা বাবা-মাকে বেশি পাশে পায়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেশে, মোবাইল ফোন বেশি হাতে পায় না।

৩. শিশুর সঙ্গে বাবা-মায়ের কম কথা বলাও শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ। ছোট পরিবারের শিশুরাও দেরিতে কথা বলে।

৪.  বাবা-মা কর্মজীবী হলে সন্তানদের কম কথা বা দেরিতে কথা বলতে দেখা যায়।

৫. প্রবাসী বাঙালি যারা তাদের শিশুরাও অনেকে দেরিতে কথা বলে। জন্মের পর মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজের কারণে অনেক সময় শিশু কম কথা বলে, দেরিতে কথা বলে।

৬. মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ইউটিউবে মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ শিশুদের দেরিতে কথা বলার কারণ।

শিশু দেরিতে কথা বলছে কি না কীভাবে বুঝবেন?

৬ মাসের একটি শিশু বাবলিং সাউন্ড করে।

১ বছরের শিশু বাবাকে বাবা ও মাকে মা বলতে শিখে।

২ বছরের শিশু দুইটা শব্দ একসঙ্গে করে ছোট বাক্য ‘আমি খাব’, ‘আমি যাব’ এসব বলতে পারে।

৩ বছরের শিশু বড় বাক্য তৈরি করে কথা বলতে পারে, ছড়া বলতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, ৩ বছর বয়সের মধ্যে সব শিশু সব কথা বলতে পারবে এটা স্বাভাবিক। যদি কোনো শিশু তিন বছরের মধ্যে কথা না বলে তাহলে বুঝতে হবে তার কোথাও কোনো অসুবিধে আছে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা সমাধানে কী করবেন

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুর প্রথম তিন বছর বয়সেই বাবা-মা অভিভাবকদের খেয়াল করতে হবে শিশুর কথা বলায় দেরি হচ্ছে কি না। তিন বছর বয়সেই শিশু সব শিখে যায়। শিশু এক বা দুই বছরে যেসব শব্দ বলার কথা ছিল তা যদি না বলে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব শিশু নিউরোলজিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

তিন বছরের মধ্যে বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে শিশুর সমস্যা শনাক্ত করে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় কথা বলার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তিন বছর পর শিশুর কথা আসতে চায় না। কথা বলার জন্য শিশুর প্রথম তিন বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া সরকারিভাবে জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব নিউরোডিজিজ অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) নামে একটি সেন্টার রয়েছে। সেখানেও দেরিতে কথা বলা শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রোগ নাকি পরিবেশগত কারণে শিশু কথা দেরিতে বলছে সেটি শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্পিচ থেরাপি দিতে হবে।

অন্য শিশুদের তুলনায় আপনার শিশু পিছিয়ে আছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

প্রথম ৩ বছর বয়সে শিশুর মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ বিকাশ হয়, পরবর্তী ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তা চলতে থাকে। শিশুর বিকাশের সময় মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত নয় কোনোভাবেই। বাবা দেরিতে কথা বলেছে বলে সন্তান দেরিতে কথা বলছে, অগ্রজিহ্বা বা আলজিহ্বা বড় তাই কথা দেরিতে বলছে এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক সময়ে শিশুর চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ডা. গোপেন কুন্ডু।

সূত্র: The Daily Star

ঘরবন্দি শিশুমনে আসবে প্রশান্তি

সারাদেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হচ্ছে আজ। করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় মানসিকভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের বন্দিদশা থেকে যেন মুক্তি মিলছে। বন্দি থাকার কারণে যেসব শিশু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, স্কুল খোলায় তাদের এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। এমনকি অনেক শিশু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে আশক্ত হয়ে পড়েছিল। স্কুল খোলায় সেই সমস্যারও সমাধান হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিক্ষকরা যেন অনেক পড়া অল্প সময়ে শেষ করতে চাপ না দেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনরোগ বিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব আমাদের সময়কে বলেন, স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যেন অতিউৎসাহী হয়ে না পড়ে। অনেক দিন পর স্কুল খুলছে, অনেক লেখাপড়া বাকি, তাই বেশি বেশি পড়ে সব দ্রুত শেষ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন এমন আচরণ না করেন। কারণ এমনটি করলে শিশুদের মানসিক চাপ বাড়বে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় যে উপকার হওয়ার কথা, তার চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। বলা যায় হিতে বিপরীত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারিভাবে স্কুলগুলোতে ইউনিসেফের সহায়তায় তৈরি করা একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে সব সময় মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের তিন ফুট শারীরিক দূরত্বে রাখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার কথা আছে। নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে ৫ ফুটের চেয়ে ছোট আকারের বেঞ্চিতে একজন ও এর চেয়ে বড় আকারের বেঞ্চিতে দুজন শিক্ষার্থী বসানো যাবে। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দিকে পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই বেশি আসবে। বাকিদের স্কুলে আসার জন্য রোটেশন সিস্টেম অর্থাৎ আজ যারা আসবে তারা কাল আসবে না- এ নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত শিশুদের জন্য ইতিবাচক। কারণ এক বছরেরও বেশি সময় তারা ঘরবন্দি হয়ে আছে। এ সময়ে অনেক শিশু বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ওপর আশক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে বাসায় বন্দি থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনকি মনের কোণে লুকিয়ে থাকা অনেক কথা যা তারা শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে, সেগুলো কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ছিল। স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিশুদের এ মানসিক সমস্যা ও অস্থিরতা দূর হবে। তবে অসুবিধাও রয়েছে। সেটি হলো- করোনাকালীন স্কুলের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। বিশেষ করে স্কুলে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া বা সেনিটাইজারের ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, শিক্ষকরা টিকা নিয়ে থাকলেও শিশুরা এখনো টিকা পায়নি। তাই তাদের স্বাস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে পিতা-মাতা যেন দুশ্চিন্তায় না পড়ে, সে জন্য তাদের কাউন্সেলিং করতে হবে।

গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে বা সরাসরি ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ছুটি ১১ সেপ্টেম্ব^র পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি সংক্রমণের হার কমে আসায় কোভিড কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

* মনের কোণে লুকিয়ে থাকা কথা কারও সঙ্গে আলোচনা করতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীদের এমন মানসিক সমস্যা ও অস্থিরতা দূর হবে -ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

* অনেক দিন পর স্কুল খুলছে, অনেক পড়া বাকি। বেশি বেশি পড়ে সব দ্রুত শেষ করতে হবে… শিক্ষকরা যেন এমন আচরণ না করেন -ডা. সালাউদ্দিন কাউসার অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস
প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণ

World Downs Syndrome Day

ডাউন সিনড্রোম কী : ডাউন সিনড্রোম একটি শিশুর বংশানুগতিক সমস্যা এবং শরীরে ক্রোমোজোমের একটি বিশেষ অবস্থা। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ২১তম ক্রোমোজোমে তিনটি ক্রোমোজোম থাকে, যাকে ‘ঞৎরংড়সু ২১’ বলা হয়।

নামকরণ : ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সারে শহরের এক মানসিক প্রতিবন্ধী আবাসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট জন ল্যাংডন ডাউন খেয়াল করেন প্রতিবন্ধীদের মধ্যে একাংশ চেহারায় অন্যদের থেকে একটু আলাদা। এদের মুখ একটু চ্যাপ্টা, ঘাড়টা ছোট। ডাউন এদের মোঙ্গলয়েড নাম দেন। এটি ডাউন’স সিনড্রোম বা শুধু ডাউন সিনড্রোম বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্থান পায়।

দেশে এর মাত্রা কেমন? আমাদের দেশে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশে^ প্রতি ৮শ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্মগ্রহণ করে থাকে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডাউন সিনড্রোম লোক রয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ হাজার ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্মায়। সে হিসাবে প্রতিদিন ১৫ জন ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্ম নেয়।

চেনার উপায় : চিকিৎসকরা বলেন, মানবদেহে ডিএনএ বা ক্রোমোজোমের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই শিশুদের মাংসপেশির শিথিলতা, কম উচ্চতা, চোখের কোনা ওপরের দিকে ওঠানো, চ্যাপ্টা নাক, ছোট কান, হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা ও জিভ বের হয়ে থাকা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এ ছাড়া কানে কম শোনা, কথা বলতে দেরি হওয়া, কম বুদ্ধি ইত্যাদি জটিলতা দেখা দেয়। অনেক সময় ডাউন সিনড্রোমের সঙ্গে জন্মগত হার্টের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যাও থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে ডাউন শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।

প্রতিরোধের উপায় : গর্ভাবস্থার প্রথম ২৪ সপ্তাহের মধ্যে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোম রোগটি শনাক্ত করা যায়। যেমনÑ আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে গর্ভের শিশুর নাকের হাড় দেখা, মায়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোমের উপস্থিতি নির্ণয়, ভ্রƒণের কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা, এসব পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির ডাউন সিনড্রোম আছে কিনা তা আজকাল সহজেই যাচাই করা যায়।

আশার ব্যাপার হলো সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নির্দেশনায় গর্ভকালীন ডাউন সিনড্রোম শনাক্তকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা (এন্টিনেটাল আল্ট্রা সাউন্ড, মায়ের রক্তের পরীক্ষা : পিএপিপি, বিটাএইচসিজি ইত্যাদি) বিএসএমএমইউতে শুরু হয়েছে। এর ফলে আমাদের দেশে গর্ভকালীন ডাউন সিনড্রোম নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা : অনেক সময় ডাউন সিনড্রোমের সঙ্গে হার্টের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার মাধ্যমে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে ডাউন শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।

যেহেতু মায়ের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাউন শিশু হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে মা হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মায়ের আগের সন্তানটি যদি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকে তবে পরের বার সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আজ ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর এ দিনটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর সরকারিভাবে ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হচ্ছে। তাই আসুন আমরা সবাই ডাউন সিনড্রোমের প্রতি সচেতন হই এবং এই শিশুদের প্রতি আরও যতœবান হই।

অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু, চেয়ারম্যান, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়