Best Child Neurologist

Movement Disorder

”শিশুদের অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা”

”শিশুদের অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা” এই বইটি পড়লে এই সমস্যাগুলোর অনেক কিছু জানতে পারবেন। বর্তমানে নিরবে এই রোগটি বেড়ে যাচ্ছে। যা আমাদের সচেতনতাই পারে অনেকটা রোধ করতে।

বইটিতে যা যা রয়েছে–

** শিশুদের অটিজম সমস্যা

** শিশুদের এডিএইচডি বা অতি চঞ্চলতা সমস্যা

** শিশুদের দেরিতে কথা বলা সমস্যা

** শিশুদের খিঁচুনি রোগ ও মৃগীরোগ

** শিশুদের সেরিব্রাল পালসি সমস্যা

** শিশুদের বুদ্ধি প্রতিববন্ধিতা

** শিশুদের ডাউন সিনড্রোম সমস্যা

** ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মা ও নবজাতক

** ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও শিশুর বিকাশের সমস্যা

** বিশেষ শিশুর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রেসপাইট কেয়ার এর ভূমিকা

** শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং কিছু কথা

উপরের বিষয়গুলো আমাদের বাচ্চাদের সাথে হয়তো হচ্ছে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারছি না।

autism-book

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ, কী করবেন

জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ কী এবং এ পরিস্থিতিতে কী করবেন জেনে নিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অটিজম অ্যান্ড এনডিডি সেলের পরিচালক এবং বিএসএমএমইউর শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডুর কাছ থেকে।  

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুদের দেরিতে কথা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু রোগের কারণে অনেক শিশু দেরিতে কথা বলে। যেমন-

১. ডাউন সিনড্রোম: ডাউন সিনড্রোমে শিশুর শরীর তুলতুলে নরম ও মুখমণ্ডলের ধরন আলাদা থাকে। এই শিশুদের বুদ্ধি হয় না, হাঁটা, বসা, চলাফেরা করতে পারে না এবং তারা কথাও দেরিতে বলে।

২. সেরিব্রাল পালসি: জন্মের সময় কান্না করতে দেরি হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যায়, মস্তিষ্ক কাজ করে না। যার ফলে হাঁটা ও বসার মতো কথা বলাও দেরিতে হয়, শিশুর বুদ্ধি কমে যায়।

৩. অটিজম: এক্ষেত্রে হাঁটতে, বসতে বা চলতে অসুবিধা নেই, কিন্তু কথা বলতে দেরি হয়। আচরণগত অসুবিধা দেখা যায়। শিশু এক জায়গায় বসে থাকে না, নিজের মতো চলে। অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশে না, কথা বলে না, কিছু আচরণ করে যা অন্য বাচ্চারা করে না।

৪. কনজেনিটাল বা জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম: জন্মের পর যেসব শিশুর জিহ্বা বড় থাকে, জিহ্বা বের করে থাকে, পেট ফোলা থাকে, হাঁটতে ও বসতে দেরি করে সেসব বাচ্চার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকে। হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা দেরিতে কথা বলে।

৫. জন্মগতভাবে শিশু যদি কানে কম শোনে, কাছ থেকে ডাকলেও সাড়া না দেয়, এমন শিশুদের কথা বলতে দেরি হয়।

৬. শিশুর জিহ্বা যদি তালুর সঙ্গে লাগানো থাকে।

৭. শিশুর ঠোঁট কাটা, তালু কাটা থাকলে কথা বলা দেরি হতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, এগুলো ছাড়াও পরিবেশগত কিছু কারণে শিশুর কথা বলতে দেরি হয়। যেমন-

১. দেরিতে কথা বলা বা কথা কম বলার পেছনে মোবাইল ফোন দায়ী। এক বছর বয়সে অনেক শিশু কথা বলা শিখতে শুরু করার পর দেখা গেছে দুই বছর বয়সে এসে তা কমে যাচ্ছে। এর কারণ শিশুর ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব।

২. গ্রামের তুলনায় শহড়ের শিশুরা দেরিতে কথা বলে। গ্রামের শিশুরা বাবা-মাকে বেশি পাশে পায়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেশে, মোবাইল ফোন বেশি হাতে পায় না।

৩. শিশুর সঙ্গে বাবা-মায়ের কম কথা বলাও শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ। ছোট পরিবারের শিশুরাও দেরিতে কথা বলে।

৪.  বাবা-মা কর্মজীবী হলে সন্তানদের কম কথা বা দেরিতে কথা বলতে দেখা যায়।

৫. প্রবাসী বাঙালি যারা তাদের শিশুরাও অনেকে দেরিতে কথা বলে। জন্মের পর মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজের কারণে অনেক সময় শিশু কম কথা বলে, দেরিতে কথা বলে।

৬. মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ইউটিউবে মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ শিশুদের দেরিতে কথা বলার কারণ।

শিশু দেরিতে কথা বলছে কি না কীভাবে বুঝবেন?

৬ মাসের একটি শিশু বাবলিং সাউন্ড করে।

১ বছরের শিশু বাবাকে বাবা ও মাকে মা বলতে শিখে।

২ বছরের শিশু দুইটা শব্দ একসঙ্গে করে ছোট বাক্য ‘আমি খাব’, ‘আমি যাব’ এসব বলতে পারে।

৩ বছরের শিশু বড় বাক্য তৈরি করে কথা বলতে পারে, ছড়া বলতে পারে।

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, ৩ বছর বয়সের মধ্যে সব শিশু সব কথা বলতে পারবে এটা স্বাভাবিক। যদি কোনো শিশু তিন বছরের মধ্যে কথা না বলে তাহলে বুঝতে হবে তার কোথাও কোনো অসুবিধে আছে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা সমাধানে কী করবেন

ডা. গোপেন কুন্ডু বলেন, শিশুর প্রথম তিন বছর বয়সেই বাবা-মা অভিভাবকদের খেয়াল করতে হবে শিশুর কথা বলায় দেরি হচ্ছে কি না। তিন বছর বয়সেই শিশু সব শিখে যায়। শিশু এক বা দুই বছরে যেসব শব্দ বলার কথা ছিল তা যদি না বলে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব শিশু নিউরোলজিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

তিন বছরের মধ্যে বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে শিশুর সমস্যা শনাক্ত করে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় কথা বলার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তিন বছর পর শিশুর কথা আসতে চায় না। কথা বলার জন্য শিশুর প্রথম তিন বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া সরকারিভাবে জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ৩৪টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব নিউরোডিজিজ অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) নামে একটি সেন্টার রয়েছে। সেখানেও দেরিতে কথা বলা শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রোগ নাকি পরিবেশগত কারণে শিশু কথা দেরিতে বলছে সেটি শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্পিচ থেরাপি দিতে হবে।

অন্য শিশুদের তুলনায় আপনার শিশু পিছিয়ে আছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

প্রথম ৩ বছর বয়সে শিশুর মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ বিকাশ হয়, পরবর্তী ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তা চলতে থাকে। শিশুর বিকাশের সময় মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত নয় কোনোভাবেই। বাবা দেরিতে কথা বলেছে বলে সন্তান দেরিতে কথা বলছে, অগ্রজিহ্বা বা আলজিহ্বা বড় তাই কথা দেরিতে বলছে এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক সময়ে শিশুর চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ডা. গোপেন কুন্ডু।

সূত্র: The Daily Star

ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্তি: শিশুর দেরিতে কথা বলার অন্যতম কারণ

অভিভাবকের সময়স্বল্পতায় শিশুকে ব্যস্ত রাখতে সহজ সমাধান হিসেবে এসব ডিভাইসকে বেছে নেওয়া হয় অধিকাংশ পরিবারে। কিন্তু এই সহজ সমাধান কঠিন সমস্যা হিসেবে ধরা পড়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্তির কারণে ধীরে ধীরে শিশু হয়ে ওঠে অন্যমনস্ক। সরাসরি কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না সে, অন্য কোনো খেলাধুলায় আগ্রহী হয় না, সময়মতো ঘুমাতেও চায় না। একপর্যায়ে পুরোপুরিই কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারে শিশু।

ইলাস্ট্রেশন: রাজিব রাজু

ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা রাখি-মাসুদ দম্পতির একমাত্র সন্তান জাবিরের বয়স তখন দেড় বছর। সারাদিন তার চোখ আটকে থাকে মোবাইল স্ক্রিনে। কখনো ভিনদেশি কার্টুন আবার কখনো মোবাইল গেমস নিয়েই ঘরের এক কোণে নিশ্চুপ বসে থাকে জাবির। কেউ ডাকলে জবাব নেই কোনো, কারো সঙ্গে কথা বলায় নেই কোনো আগ্রহ। অথচ সাত মাস বয়স থেকেই ‘মা’, ‘বাবা’র মতো শব্দ উচ্চারণ করতে শিখেছিল সে। দিন দিন যেন কথা বলতে ভুলে গেছে জাবির।

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা-বাবা তখন তাকে নিয়ে যান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে। কেস হিস্ট্রি শুনে, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানালেন সবার আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে সরাতে হবে জাবিরকে। মোবাইল-ট্যাব-ল্যাপটপ সবচেয়ে বড় শত্রু তার।

ডাক্তারের পরামর্শ মেনে স্পিচ থেরাপি, ব্যায়াম, মা-বাবার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ আর পরিচর্যায় পরবর্তী তিন বছরে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে জাবিরের কথা বলা আর আচার-আচরণ। এই দম্পতির পরবর্তী সন্তান জন্মের পর থেকেই তাই অতিরিক্ত সচেতন ছিলেন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে।

বর্তমানে অভিভাবকদের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশুর কথা বলতে দেরি হওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: গোপেন কুমার কুন্ডুর ভাষ্যে, “সাধারণত শিশুরা চার থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে ‘মামা-বাবা’র মতো বাবলিং সাউন্ড করে, এক বছরে এক-দুইটা করে অর্থবহ শব্দ বলতে শেখে, দুই বছরে ছোট ছোট বাক্য গঠন করতে পারে, তিন বছরে ছড়া বলতে শেখে, এর কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে মা-বাবাকে বুঝে নিতে হবে শিশুর বিকাশে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে কথা বলতে সমস্যা হওয়ার ঘটনা খুব সাধারণ।”

বিশেষজ্ঞ এই ডাক্তারের মতে, শিশুদের কথা বলতে দেরি হওয়ার পেছনে মূলত দুই ধরনের কারণ থাকতে পারে। প্রথমটি জেনেটিক, দ্বিতীয়টি পরিবেশগত। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব শিশুর বিকাশে বিঘ্ন ঘটার পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সহজ সমাধান যখন বিপদের কারণ

শিশুর এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরপরই সাধারণত বাবা-মায়েরা তাকে মোবাইল বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে দেয়, দীর্ঘদিনের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা থেকে জানান ডাক্তার গোপেন কুমার। অভিভাবকের সময় স্বল্পতায় শিশুকে ব্যস্ত রাখতে সহজ সমাধান হিসেবেই এসব ডিভাইসকে বেছে নেওয়া হয় অধিকাংশ পরিবারে। কিন্তু এই সহজ সমাধান কঠিন সমস্যা হিসেবে ধরা পড়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই।

মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্তির কারণে ধীরে ধীরে শিশু হয়ে ওঠে অন্যমনস্ক। সরাসরি কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না সে, অন্য কোনো খেলাধুলায় আগ্রহী হয় না, সময়মতো ঘুমাতেও চায় না। একপর্যায়ে পুরোপুরিই কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারে শিশু। 

মোবাইলে হিন্দি-ইংরেজি নানান ভাষার কার্টুন দেখতে দেখতে কখনো কখনো নিজের বানানো অর্থহীন শব্দে কথা বলার চেষ্টাও করতে পারে সে। এছাড়াও চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, ঘাড় ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো নানা শারীরিক সমস্যারও শিকার হয় শিশু। ডিভাইসের প্রতি আসক্তি থেকে ‘স্ক্রিন ডিপেন্ডেন্সি ডিজঅর্ডারে’ও ভুগতে শুরু করে শিশু।

সময় থাকতে হতে হবে সচেতন

শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য প্রথম পাঁচ বছর বয়সকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বাচ্চার মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ বিকাশ ঘটে তিন বছর বয়স পর্যন্ত। বাকি ২০ শতাংশ বিকাশ ঘটে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে। তাই এই বয়সেই শিশুদের দিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখতে হয় বাবা-মায়ের।

ডা: গোপেন কুমার কুন্ডু বলেন, “প্রথম তিন বছর বয়সটা শিশুদের বিকাশের জন্য ‘গোল্ডেন উইন্ডো পিরিয়ড’ হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে শিশু যে পরিবেশে বড় হবে সেটা তার সারাজীবনের উপর প্রভাব ফেলবে। এই সময়টায় কোনো কারণে শিশুর ব্রেনের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সারিয়ে তোলা কষ্টকর।”

শিশুর এই বিকাশকালীন সময়ে কোনো সমস্যা খেয়াল করলে দেরি না করে সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন এই চিকিৎসক। শিশুর কথা বলতে না চাওয়া, ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্তি, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখলে জানাতে হবে ডাক্তারকে।

‘আমাদের কাছে সাধারণত দুই-তিন বছর বয়সী বাচ্চাদের নিয়ে মা-বাবারা বেশি আসেন। দুই বছর বয়স বা তার আগে বাচ্চাকে নিয়ে এলে আমরা একটু বেশি সময় পাই সাহায্য করার। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চার ব্রেইনের নিউরনের বিকাশ ঘটানোর জন্য আমরা চেষ্টা করতে পারি বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে। কিন্তু যদি কোনো বাচ্চাকে পাঁচ বছর বয়সের পর নিয়ে আসা হয় তাহলে নিউরনের বিকাশের আর সময় থাকে না,’ বলেন ডা: গোপেন কুমার।

শিশুর কোনো জেনেটিক জটিলতা না থাকলে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করে অনেকাংশেই সারিয়ে তোলা যায় কথা না বলার সমস্যা। চিকিৎসার জন্য সহায়তা করতে পারেন শিশু নিউরোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্ট্ররা। এছাড়া নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রেও সহজে পাওয়া যাবে চিকিৎসা।

বড় দায়িত্ব বাবা-মায়ের

ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেন শিশুর বিকাশে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য সবচেয়ে বেশি তৎপর হতে হবে শিশুর বাবা-মাকে। শুরু থেকেই শিশুকে একান্ত সময় দেওয়া, তার সঙ্গে সারাক্ষণ কথা বলা, অন্যান্য শিশুর সঙ্গে খেলতে নিয়ে যাওয়া- ইত্যাদির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে তাদের। অভিভাবকেরা উভয়ই কর্মজীবী হলে দুজনে সময় ভাগাভাগি করে শিশুকে সঙ্গ দিতে হবে। শিশুর মঙ্গলের জন্য জীবনযাপন পদ্ধতিতে আনতে হবে পরিবর্তন।

ডাক্তার গোপেন কুমারের পরামর্শ অনুযায়ী, বাচ্চার ঘুমের সময় ঠিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিভাইসে আসক্তির কারণে অনেক সময় শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমের অভ্যাস ঠিক করতে শোবার ঘরে উপযুক্ত পরিবেশ রাখতে হবে। শোবার ঘরে টিভি থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।

শিশুর কথা বলা শেখার সময়টায় যেকোনো একটি ভাষায় তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ‘বাচ্চা যখন তার আশেপাশে কয়েকটি ভাষায় কথা শুনতে পায় তখন সে বুঝতে পারে না কোন ভাষায় কথা বলবে। এ কারণে মাতৃভাষা বা যে ভাষায় আশেপাশের মানুষজন কথা বলছে কেবল সে ভাষাতেই শিশুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কার্টুন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান দেখলেও তা হতে হবে একই ভাষায়। নয়তো শিশুর কথা শিখতে সমস্যা হয় খুব,’ বলেন শিশু নিউরোলজিস্ট গোপেন কুমার কুন্ডু।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিতে মানতে হবে নিয়মাবলি

প্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে নতুন প্রজন্মের শিশুকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত না করতে চাইলে কিছু নিয়ম মেনে তাকে মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন:

·       তিন বছর পূর্ণ হওয়ার পর মোবাইল-ট্যাবের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস দেওয়া যেতে পারে শিশুকে।
·       অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে দিনে ঘণ্টাখানেকের জন্য এসব ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে শিশু।
·       দেখতে হবে শিক্ষণীয় প্রোগ্রাম।
·       ঘুমের আগে দেওয়া যাবে না ইলেকট্রনিক ডিভাইস

সূত্র: tbsnews.net

দেশে প্রায় ২৩ লাখ শিশু অটিজমে ভুগছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। অটিজমে আক্রান্ত এসব শিশুদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু গবেষণায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা বাড়াতে হবে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) আয়োজিত ‘সার্টিফিকেট কোর্স অন নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক কোর্সের উদ্বোধনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। যারা অটিজমে ভুগছে, তারা আগে স্কুলে যেতে পারত না, বাড়িতে মেহমান আসলে তাদের লুকিয়ে রাখা হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের।

ডাউন সিনড্রোমে ভোগে দেশের ২ লাখ শিশু

ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর সরকারিভাবে ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর ডাউন সিনড্রোম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘যুক্ত মোড়া’।

অটিজম ও স্নায়বিকাশজনিত শিশুদের নিন বাড়তি যত্ন

অটিজম ও অন্যান্য স্নায়বিক বিকাশে সমস্যাবিষয়ক রোগব্যাধি যেমন অটিজম, সেরেব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বুদ্ধিমত্তা কম ইত্যাদি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম থাকে। তারা নিজেদের রোগ ব্যাধি বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না বিধায় করোনাভাইরাসহ যেকোনো জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে তার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তাদের থাকে কম। তাই নিতে হবে বিশেষ যত্ন।

বিশেষ শিশুদের জন্য করণীয়

অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু , চেয়ারম্যান, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও সংক্রমিত করে জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে দূরে রাখতে অটিজম ও বিশেষ শিশুদের বেশ গুরুত্ব দিতে হবে। অভিভাবকদের উচিত তাদের খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলা, বিশ্রাম, শিক্ষাদীক্ষা—সব কিছু একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী চলতে অভ্যস্ত করানো।